আসছে শীত, বাড়ছে করোনা শঙ্কা ,গরীবের কপালে চিন্তার ভাজ

আসছে শীত, বাড়ছে করোনা শঙ্কা (মূল হেড)গরীবের কপালে চিন্তার ভাজ (হ্যাঙ্গার)

রাসেল হোসাইন
দেশজুরে শীতের আমেজ বাড়তে শুরু করেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ ভালোই শীত পরছে। শীত অধীকাংশ মানুষেরই পছন্দের একটি ঋতু। তাই অনেকেই এবারের শীতকে উপভোগ করতে কেনাকাটা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। পছন্দমত রং-বেরঙের শীতের পোশাকও কিনছেন। সামর্থবানদের কাছে এই ঋতুটি উপভোগের হলেও বেকায়দায় পরতে হয় গরীব ও ছিন্নমূল মানুষদের। শীতের পোষাকের অভাবে অনেককেই কষ্ট করতে হয়। অনেক সময় শীতের কারনে কাজে যেতে না পারলে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।
এবছর করোনা মহামারীর কারনে সামাজিক, ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠানই মানুষ ভালোভাবে পালন করতে পারেনি। আর এই শীতে করোনা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও শীত বা ঠা-ার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কোন সম্পর্ক রয়েছে বলে এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। তবে করোনাভাইরাসের অন্য যে গোত্রগুলো রয়েছে, যার কারণে সাধারণ সর্দি-কাশির মতো রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, সেসব ঠা-া পড়লে বেড়ে যায় বলে দেখা গেছে।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রওশন আরা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদিও ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমে আসার পর এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে, তবে ঠা-ার সঙ্গে বা তাপমাত্রার সঙ্গে করোনাভাইরাসের বাড়া-কমার কোন সম্পর্ক আছে, সেটা আমরা এখনো পাইনি। করোনাভাইরাস বিশ্লেষণে সবকিছুই একেবারে নতুন ধরণের দেখা যাচ্ছে।’ তবে করোনা ভাইরাসের বিস্তারে ঠা-া বেশি দায়ী, নাকি মানুষের আচরণ- এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনো দ্বিমত আছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শীতের মধ্যে সাধারণ রোগ কিংবা করোনা যেটাই বারুকনা কেন জনগণের মাঝে এখনো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যেসব সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া আছে তা এখনো মানছেন না রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ। এমনকি গণপরিবহনে যত ছিট তত যাত্রী পরিবহন এবং পূর্বের ভাড়ায় বাস চলাচলের বিপরিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক যে শর্ত দিয়েছেন, তা তোয়াক্কাই করছেন না পরিবহন শ্রমিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে দেখা যায় বাসে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকা সত্ত্বেও দুই পাশে দাড় করিয়ে যাত্রী নিচ্ছেন। কদমতলি থেকে আব্দুল্লাপুর চলাচল করা একটি বাসের সহকারি সুজন (২৭)। তার সাথে বাসে অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো এবং বিআরটিএ’র স্বাস্থ্য বিষয়ক যে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে তা না মানার বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই সব কিছু মানলে জীবন বাজবো না। কয়দিন আগে লকডাউনে গাড়ি বন্ধ ছিলো। বউ-বাচ্চা নিয়া কি যে কষ্ট করছি। কেউ তো কোন সাহায্য কওে নাই, মালিকরাও করে নাই।’ সরকার থেকে যে ত্রানের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো তা পেয়েছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো আর ঢাকার ভোটার না, তাই দেয় নাই।’
মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এর প্রধান সড়কে বসে ডিজিটাল মেশিনে পথচারিদের ওজন মেপে দুই টাকা করে নিয়ে বস্তিতে ভাড়া থেকে কোনভাবে জীবন পার করছেন বরিশালের মাহিনুর বেগম (৫২)। অনেক আগেই স্বামী মারা গেছেন। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। গতকাল কথা হয় মাহিনুর বেগমের সাথে। তিনি জানালেন, করোনা আসার পর থেকে তার ব্যবসা মটেও ভালো যাচ্ছে না। এমনকি গত লকডাউনে তাকে খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। মাহিনুর ঢাকার ভোটার হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোন সরকারি সহায়তা পাননি। শুধু স্থানীয় রুবেল নামে এক যুবক কিছু টাকা এবং চাল-ডালসহ প্রয়োজনী দ্রব্যাদি কিনে দিয়েছেন।
এসকল বিষয় নিয়ে কথা হয় একজন সমাজকর্মী, ভিলেজ ইন্টাগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহবুবুল হকের সাথে। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী যেহেতু করোনার মধ্যে ঠা-াজনিত সমস্যাগুলো রয়েছে সেক্ষেত্রে শীত বাড়লে সকলকে আরো সাবধান হওয়া উচিৎ। আর দেশে দুর্যোগ বা মহামারী আসলে সরকারও ত্রান বা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে শুষ্ঠু মনিটরিং করলে সঠিক ব্যাক্তি পাবে বলে আমরা আশা করি।

আপনি আরও পড়তে পারেন